বাংলাদেশ স্বদেশ প্রেম রচনা | Bangladesh Love Composition

এখন বর্তমানে খুবই কমন একটি রচনা পরীক্ষা আসার মত সেটি হচ্ছে স্বদেশ প্রেম রচনা। আপনারা যাতে করে সর্বোচ্চ মার্ক পেতে পারেন সে কথা বিবেচনা করে আমি এই স্বদেশ প্রেম রচনাটি আপনার সামনে তুলে ধরছি।

স্বদেশ প্রেম রচনা

স্বদেশ প্রেম রচনা ক্লাস ১০ | স্বদেশ প্রেম রচনা ২০ পয়েন্ট |স্বদেশ প্রেম রচনা hsc | স্বদেশ প্রেম রচনা ২৫ পয়েন্ট

স্বদেশপ্রেম

ভূমিকা : স্বদেশ যেকোনো মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল। কথায় বলে- ‘মা আর মাতৃভূমি উভয়ের ভালোবাসার মতো এমন পরশ ভালোবাসা আর হয় না।’ সেক্ষেত্রে স্বদেশকে ভালোবাসা প্রতিটি মানুষের হৃদয়জাত প্রবৃত্তি। পৃথিবীতে এমন কেউ নেই যে তার দেশকে ভালোবাসে না। যে স্বদেশকে ভালোবাসে না সে আর যাই হোক ভালো মানুষ হতে পারে না। একটু লক্ষ্য করলে আমরা দেখি, পাখি ভালোবাসে তার আপন নীড়কে, বনের ভয়ানক জানোয়ার তার গহীন বনকে ভালোবাসার টানে ভালোস্থানে রাখলেও সে বনে পালিয়ে যায়। নিজের গৃহের প্রতি অবাধ টান প্রতিটি প্রাণীর ভেতর রয়েছে, রয়েছে ভালোবাসার মতো তীব্র আগ্রহ। মানুষও তার দেশকে ভালোবাসে কারণ প্রতিটি মানুষ যেখানে মানুষ হয়ে ওঠে সে স্থানকে মায়ের পরেই ভালোবাসা তার কর্তব্য হয়ে ওঠে। মা, মাতৃভাষা আর মাতৃভূমি প্রতিটি মানুষের দেহে, মনে, প্রাণের সাথে মিশে থাকে। মা আর মাতৃভাষার সাথে মাতৃভূমি মানুষের কাছে সর্বাপেক্ষা গ্রহণীয় ও মূল্যবান সম্পদ। তাই কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ভাষায় বলা যায়-
  • ‘মিছা মণি মুক্তা হেম
  • স্বদেশের প্রিয় প্রেম
  • তার চেয়ে রত্ন নেই আর।’

স্বদেশপ্রেম কী ও কেন : স্বদেশপ্রীতি মানুষের একটি মহৎ ও শ্রেষ্ঠগুণ। নিজ দেশ ও জাতির প্রতি গভীর ভালোবাসা, নিগূঢ় শ্রদ্ধাবোধ, বিস্মৃত অনুরাগ, সুতীব্র আকর্ষণ এবং যথার্থ আনুগত্যকে স্বদেশপ্রেম বলে। সত্যিকার অর্থে, স্বদেশের উন্নতিকল্পে ব্যক্তিস্বার্থ বাদ দিয়ে সব ত্যাগের সাধনাকেই দেশপ্রেম বলে। দেশপ্রেম মানুষের হৃদয়জাত প্রবৃত্তি। স্বদেশপ্রীতি মানুষের ভেতর জন্ম দেয় মহৎ হওয়ার গুণাবলী। এই গুণাবলী মানুষকে শ্রেষ্ঠ হতে সহায়তা করে। স্বদেশপ্রেম মানুষকে ক্ষুদ্র স্বার্থান্ধ থেকে রক্ষা করে তাকে ব্যাপক ও বৃহত্তের মধ্যে কাজ করার সুযোগ দেয়। এক কথায়, জন্মভূমির প্রতিটি ধূলিকণাকে নিজ দেহের প্রতিটি কোষ মনে করে তাকে ভালোবাসা ও গভীর শ্রদ্ধাবোধ দেখানোই হচ্ছে স্বদেশপ্রেম। তাই কথায় বলে- ‘জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরীয়সী’ অর্থাৎ জননী ও জন্মভূমি স্বর্গের চেয়েও প্রিয় বলেই মানুষ জন্মভূমির অস্তিত্ব রক্ষার্থে জীবনকে অকাতরে বিসর্জন দিতে ভয় পায় না।

স্বদেশপ্রেমের স্বকীয় সৃষ্টি : মানুষ হিসেবে যে কেউ তার স্বদেশ ও স্বজাতিকে অন্য কিছুর চেয়ে বেশি ভালোবসে। মানুষ যুক্তি নির্ভর জীব বলে স্বদেশের প্রতি তার ভালোবাসা গভীরতর কারণ থেকে উৎপত্তি লাভ করে। বনের পশুকে স্থানচ্যূত করলে তার অবস্থা সম্পর্কে আমরা অবশ্যই অবগত হই। পশুপাখির এইধর্মী আচরণকে সংসর্গজাত বলা হয়ে থাকে। কিন্তু মানুষের স্বদেশপ্রীতি কেবল সংসর্গজাত নয়। জন্ম-জন্মান্তরের বংশানুক্রমিক ধারায় একটি বিশিষ্ট রীতি-নীতি, শিক্ষা, সভ্যতার জাতীয় সমন্বয় থেকে এ ধরনের প্রবৃত্তি উদ্ভূত হয়। আমরা যে দেশে জন্মগ্রহণ করি, সে দেশের অতীত ইতিহাস, তার ঐতিহ্যের ধারা, মানুষের সামাজিকতা, তাদের গোত্রীয় পরিবেশবোধ আমাদের স্নায়ুতে মিশে একাকার হয়ে যায় এবং এ সব সব কিছুই আমাদের আকৃষ্ট করে। এটা বাইরের সংসর্গ নয়, এটা স্বদেশের জন্য, স্বজাতির জন্য একটা নিবিড় শ্রদ্ধা, প্রীতি ও অনুভূতিজাত চৈতন্যবোধ। আর এভাবেই স্বদেশের প্রতি আমাদের স্বকীয় ভালোবাসা সৃষ্টি হয়।

স্বদেশপ্রেমের স্বরূপ ও তার চেতনা : স্বদেশের স্বরূপ স্বদেশকে প্রাণের মতো ভালোবাসা। দেশের সবকিছুতে নিজেকে উৎসর্গ করার নাম স্বদেশপ্রেমের চেতনা। মা, মাটি আর মানুষকে ভালোবাসার মধ্যে স্বদেশপ্রেমের মূল সত্য নিহিত। ফলে সে দেশের ভাষা, সাহিত্য, ইতিহাস, ঐতিহ্য, সমাজ-সংস্কৃতিজীবন ও পরিবেশের সঙ্গে যেমন গড়ে ওঠে তার শেকড়ের বন্ধন, তেমনি মা, মাতৃভাষা ও মাতৃভূমির প্রতি সৃষ্টি হয় চিরায়ত গভীর ভালোবাসা। ভালোবাসার এই আবেগময় প্রকাশ মানুষকে স্বজাতি ও স্বদেশের প্রেমে উদ্বুদ্ধ করে তোলে। চিন্তায়, কথায়, কাজে স্বদেশের জন্য যে ভালোবাসা প্রকাশ পায় তাইই প্রকৃত স্বদেশপ্রেম। বিশেষভাবে বলতে গেলে বলতে গেলে বলতে হয়, স্বদেশপ্রেম যেসব বৈশিষ্ট্য দ্বারা উজ্জ্বল সেগুলো হলো- আত্মত্যাগ, বীরত্ব, সরলতা, শর্তহীনতা, কৃতজ্ঞতা, দায়িত্ব, কর্তব্য ও একাত্মবোধ। কবির ভাষায় বলা যায়-

  • ‘কিন্তু যে সাধেনি কভু জন্মভূমি হিত
  • স্বজাতির সেবা যেবা করেনি কিঞ্চিৎ
  • জানাও সে নরাধমে জানাও সত্বর
  • অতীব ঘৃণিত সেই পাষণ্ড বর্বর।’

স্বদেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হওয়া : স্বদেশপ্রেমের প্রতি ভালোবাসা ও হৃদয়ের টান মানুষের সবচেয়ে আপন প্রবৃত্তি ও মৌলিক অনুভূতি। এ ভালোবাসা কখনো কখনো সুপ্ত থাকে, কখনো কখনো তা প্রকাশ পায় মহা ধুমধামে। দেশ যত ক্ষুদ্র বা পরিসরে ক্ষুদ্র হোক না কেন প্রতিটি দেশপ্রেমিক মানুষের কাছে তার জন্মভূমি, তার দেশ সবার সেরা। দেশকে যে ভালোবসে সে তার স্বদেশের জন্য তার ধন-মান এমনকী জীবন পর্যন্ত উৎসর্গ করতে পারে। ঐক্যবদ্ধভাবে মানুষ যখন একই জীবন ধারায়, একই ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারায় পুষ্ট হয়ে একই আদর্শের অনুপ্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ওঠে তখন মৃন্ময়ী দেশ চিন্ময়ী হয়ে ওঠে। স্বদেশ হয়ে ওঠে অতি আনন্দের পীঠস্থান। সুখের দিনে স্বদেশের প্রতি মানুষের ভালোবাসার চেয়ে দেশের দুর্দিনে স্বদেশের প্রতি মানুষের ভালোবাসার তীব্রতা লক্ষ করা যায়। দেশের সংকটে দেশ যখন নিজের অস্তিত্ব হারাতে বসে তখন একজন স্বদেশপ্রেমিকের মূল কর্তব্য পালনের সুবর্ণ সুযোগ আসে। যখন রক্ত চক্ষু বিদেশি শাসকের, যখন পরাধীনতার বিষ জ্বালায় জর্জরিত মানুষ মুক্তি কামনায় উদ্বেল অস্থির, যখন দেশের মানুষের মধ্যে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার প্রয়োজন হয়, তখনই আসে মানুষের স্বদেশপ্রেমের অগ্নিমন্ত্রের দীক্ষালগ্ন। জীবন অপেক্ষা স্বদেশ তখন হয়ে ওঠে আরো অতি প্রিয়তর। তখন মনে হবে, দেশের জন্য নিঃশেষে প্রাণ কে করিবে দান মন্ত্রণার মতো। বিদেশ গেলে বা ফেরত এলে এই দেশের মর্মগত অর্থ বোঝা যায়। তাই কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের কণ্ঠে ভেসে আসে,

  • ‘এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি
  • সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি।’

স্বদেশপ্রেম শিক্ষা : দেশকে ভালোবাসতে শিখলেই দেশের কল্যাণে জীবন উৎসর্গ করার মনোবৃত্তি গড়ে উঠবে। যদিও স্বদেশপ্রেম মানুষের একটি সহজাত প্রবৃত্তি তবু এ গুণটি অর্জন করতে হয়। আর এ গুণ অর্জনের জন্য দেশের সুদিনে বা দেশের উন্নয়নে তৎপর থাকতে হবে। আর দেশের দুর্দিনে স্বাধীনতা রক্ষার জন্য জীবন উৎসর্গ করার মনোবৃত্তি গড়ে তুলতে হবে। দেশ সমন্ধে জানতে হবে, দেশের মাটি ও মানুষকে ভালোবাসতে হবে আর তাহলেই দেশপ্রেমের মহৎ শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া যাবে। মনীষীদের মতে- ‘দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ।’

স্বদেশপ্রেম সুন্দর ও মহত্তে¡র উৎস : যে কারো কাছে তার স্বদেশ তার চোখে পৃথিবীর সেরা, এবং তার রূপের কাছে অন্য কারো দেশ সুন্দর হতে পারে না। এভাবেই দেশের প্রতি মানুষের ভালোবাসা সুন্দর ও মহত্ত্বে ভরে ওঠে। স্বদেশপ্রেম মনুষ্যবোধকে জাগ্রত করে। স্বদেশের ভালোবাসা শুধু মানুষের মোহমুক্তি ঘটায় না, সঙ্গে সঙ্গে তাকে স্বীয়স্বার্থ ঊর্ধ্বে তুলে ধরে। স্বদেশপ্রেম মানুষের ভেতরকার সব সংকীর্ণতা দূর করে তাকে মহৎ হওয়ার দীক্ষা দেয়। স্বদেশপ্রেমের স্পর্শে মানুষের ভেতরের সব পশুত্ববোধ দূর হয় এবং মানব কল্যাণে মানুষ নিজেকে উৎসর্গ করার মন্ত্রণা অর্জন করে। যাবতীয় সুন্দর ভাবনা ও মহৎ উদ্দেশ্য স্বদেশপ্রেমে অধিভূক্ত। তাই মধ্যযুগের কবি আবদুল হাকিমের ভাষায় বলা যায়-

  • ‘স্বদেশের উপকারে নাই যার মন
  • কে বলে মানুষ তার পশু সেই জন।’

স্বদেশপ্রেমের উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত : যুগে যুগে স্বদেশের জন্য মানুষ বহু দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন; যাঁরা আজও দেশের মানুষের কাছে অনুপ্রেরণার অন্যতম উৎস হয়ে আছেন। উদাহরণস্বরূপ উপমহাদেশের বঙ্গবন্ধু, শেরে-ই-বাংলা, ভাসানি, সূর্যসেন, ক্ষুদিরাম, মহাত্মা গান্ধি, নেতাজি সুভাষ বসু, কাজী নজরুল ইসলাম, রবীন্দ্রনাথসহ আরো হাজার হাজার মানুষ এবং বাইরের দুনিয়ার বাস্তব উদাহরণ রয়েছে ইতালির গ্যারিবাল্ডি, রাশিয়ার লেলিন ও স্ট্যালিন, চীনের মাও সেতুং, আমেরিকার জর্জ ওয়াশিংটন, ভিয়েতনামের হো-চি-মিন, তুরস্কের আতাতুর্ক মোস্তফা কামাল, আর্জেন্টিনার চে গুয়েভারা, জার্মানির এ্যাডলফ হিটলারসহ আরো অনেকেই নিজ দেশের জন্য আত্মবিসর্জন করেছেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৯৫২ ও ১৯৭১ সালে দেশের জন্য জীবন দেয়া লক্ষ লক্ষ শহিদ ও জীবিত মুক্তিযোদ্ধা, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক, ছাত্রসহ শ্রমজীবী মানুষের উৎসর্গীত আত্মদান এক চরম দেশপ্রেমের উদাহরণ। তাই বলা যায়-

  • ‘দেশের জন্য যারা অকাতরে দিয়ে গেলো প্রাণ
  • হবে না হবে শোধ তাদের বিস্মৃত অবদান।’

স্বদেশপ্রেম ও বিশ্বপ্রেম : স্বদেশপ্রেম বিশ্বপ্রেমেরই একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আমাদের বর্তমান জীবনে জাতীয়তা যখন সংকীর্ণতার অন্ধকূপে বন্দি হয়ে উগ্র রূপ ধারণ করে, তখন বিশ্বপ্রেম পদদলিত হয়। উগ্র জাতীয়তাবোধে কোনো স্বার্থকতা নেই। দেশ জননী, বিশ্বজননী এক ও অভিন্ন। কারণ দেশ জননীর বুকের ওপর বিশ্বজননীরও আঁচল পাতা। স্বদেশ ও বিশ্বপ্রেম তাই আমাদের জাতীয় জীবনের এপিঠ-ওপিঠ। তাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানের সুরে বলা যায়-

  • ‘ও আমার দেশের মাটি, তোমার পরে ঠেকাই মাথা
  • তোমাতে বিশ্বময়ী-তোমাতে বিশ্বমায়ের আঁচল পাতা।’

ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত স্বদেশভূমির প্রতি ভালোবাসায় উদ্বেলিত হয়ে বলেছিলেন-
  • ‘হে বঙ্গ, ভাণ্ডারে তব বিবিধ রতন;
  • তা সবে, (অবোধ আমি!) অবহেলা করি,
  • পর-ধন-লোভে মত্ত, করিনু ভ্রমণ
  • পরদেশে, ভিক্ষাবৃত্তি কুক্ষণে আচরি।
  • কাটাইনু বহু দিন সুখ পরিহরি!’
উপ-সংহার : সবাইকে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে স্বদেশকে সবার উপরে স্থান দিতে হবে। স্বদেশ মানুষের নিকট পরম সাধনার ধন; কামনার অক্ষয় স্বর্গ। যে দেশ বাঁচার অনুপ্রেরণায় আলো, বাতাস, অন্ন, জল, বস্ত্রসহ সন্তান সুলভ জীবনের সবুজাভ আনন্দ দিলো সেই মমতামণ্ডিত আনুগত্যের দেশকে ভালোবাসা আমাদের শ্রেষ্ঠ কাজ। যেহেতু দেশপ্রেমিক ব্যক্তিই বিশ্ববরেণ্য খ্যাতি লাভ করে। স্বদেশপ্রেমের মাধ্যমে আমরা বিশ্ব ভ্রাতৃত্বের সেতু বানাতে পারি। তাই, যত বড় ঝড়-ঝঞ্ঝা, বিপদ আসুক না কেন আমরা আমাদের জীবন দিয়ে দেশকে রক্ষা করবো, দেশের সেবা করবো আর এতেই স্পষ্ট হবে আমাদের স্বদেশপ্রেমের অনন্যতা।

স্বদেশ প্রেম রচনা ক্লাস ৫ | স্বদেশ প্রেম রচনা ক্লাস ৮ | স্বদেশ প্রেম রচনা ১৫ পয়েন্ট

স্বদেশ প্রেম রচনা

ভূমিকা: মানুষ স্বাভাবিকভাবেই তার জন্মভূমিকে ভালোবাসে। জন্মভূমির আলো, বাতাস,জল, সবুজ প্রকৃতি মানুষের মনকে প্রশান্ত করে তোলে।স্বদেশ প্রেমের মধ্যে মানবজাতির নিবিড় প্রশান্তি নিহিত থাকে। প্রকৃত দেশপ্রেম নিজেকে নিজের মধ্যে গুটিয়ে রাখতে শেখায় না বরং বৃহত্তর পৃথিবীর মধ্যে নিজেকে ছড়িয়ে মহান আদর্শকে প্রচার করে। জন্মস্থানের প্রতিটি ধুলিকণা তার কাছে মনে হয় সোনার চেয়েও দামি।

প্রিয় মাতৃভূমির মাটি ও তার বীর সন্তানদের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা করাই হলো প্রকৃত স্বদেশপ্রেম।এক কথায়,স্বদেশ প্রেম হচ্ছে দেশের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। গর্ভধারিণী জননীকে যেমন সন্তান ভালোবাসে,ঠিক তেমনি দেশ মাত্রিকাকে মানুষ জন্মলগ্ন থেকেই শ্রদ্ধা করতে এবং ভালবাসতে শেখে। দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা যে কোনো মূল্যে রক্ষা করা প্রত্যেক দেশপ্রেমিকের অবশ্য কর্তব্য।

স্বদেশ প্রেমের উৎস: এই পৃথিবীর প্রতিটি মানুষই নিজেকে ভালোবাসে, এবং নিজেকে ভালোবাসার মধ্য দিয়েই সৃষ্টি হয় স্বদেশের প্রতি ভালোবাসা। কেননা জন্মের পর আমাদের সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয় হচ্ছে মা ও মাতৃভূমি। স্বদেশের মাটি,পানি, বাতাসের সাথে আমরা অবিচ্ছেদ্য বন্ধনে আবদ্ধ।তাই এগুলোর প্রতি ভালোবাসা থেকেই সৃষ্টি হয় স্বদেশ প্রেম। মাছকে যেমন জল থেকে তুলে আনলে ছটফট করতে থাকে,তেমনি মাতৃভূমি থেকে দূরে সরে গেলে মানুষ গভীর আবেগ অনুভব করতে পারে।
 

স্বদেশ প্রেমের বৈশিষ্ট্য : “স্বদেশপ্রেম সংক্ষিপ্ত, আবেগের উন্মত্ত বিস্ফোরণ নয়, বরং সারাজীবনের শান্ত এবং অবিচলিত উত্সর্গ।” – অ্যাডলাই স্টিভেনসন

মাতৃভূমির প্রতি আকর্ষণ প্রতিটি জীবের স্বভাবজাত ধর্ম। মাছেরা পানিতে, গরুরা গোয়াল ঘরে, পশুরা জঙ্গলে, পাখিরা তাদের শান্ত নীড়ে খুবই স্বাচ্ছন্দ ও পরম সুখ অনুভব করে। প্রতিটি মানুষের তার দেশের সুনাম ও ‍খারাপ সংবাদ যথাক্রমে সুখ ও ‍দুঃখ অনুভব করায়। আর যারা দেশ প্রেমিক তারা নিজের জীবনের চেয়ে দেশের মর্যাদাকে বেশি গুরুত্ব দেয়।

মানব জীবনে স্বদেশ প্রেমের প্রভাব: দেশপ্রেমের প্রভাবে ব্যক্তির মহৎ গুণাবলী প্রকাশ পায়। স্।স্বদেশপ্রেমের প্রভাব ব্যক্তি , পরিবার, সমাজ তথা নিজের দেশের সবকিছুকেই প্রভাবিত করে।স্বদেশ প্রেম মানবীয় গুণাবলীর মধ্যে অন্যতম। দেশের প্রতি অনুগত একজন কখনো অন্যের ক্ষতি করতে পারে না। প্রকৃত মানুষ হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে দেশপ্রেমের প্রভাব রয়েছে। কবি সমুদ্র গুপ্তের ভাষায়, "স্বদেশপ্রেম থেকে বিশ্বপ্রেম। যে নিজের দেশকে ভালোবাসে সে বিশ্বপ্রেমিক, মানব-প্রেমিক, মানবতাবাদী"। দেশ প্রেম একজন মানুষের মনকে প্রকৃত মনুষত্বের সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িত করতে সাহায্য করে।
 
সাহিত্য ও স্বদেশপ্রেম: সাহিত্যিক স্বদেশ প্রেমের ভূমিকার অন্যতম নিদর্শন হচ্ছেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত।তিনি নিজের ভাষাকে গুরুত্বহীন বলে পাড়ি জমিয়েছিলেন ভিনদেশে। সেখানে নিজের প্রতিবার কোন গুরুত্ব না পেয়ে এবংনিজের মাতৃভাষার গুরুত্ব বুঝতে পেরে দেশে ফিরে দেশমাত্রিকাকে উপসর্গ করে বলেছেন,

"বহু দেশ দেখিয়াছি বহু নদ দলে, কিন্তু এ স্নেহের তৃষ্ণা মেটে কার জলে?"

এছাড়াও যুগে যুগে অসংখ্য মনীষী স্বদেশের কল্যাণে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন।সাহিত্য মানবজীবনের প্রতিচ্ছবি।যুগ যুগ ধরে সাহিত্যচর্চায় আমরা দেশপ্রেমেরে নানান ধারাবাহিকতা দেখে আসছি।

বর্তমান সামাজিক পরিস্থিতি ও স্বদেশপ্রেম: বর্তমান এই আধুনিক সমাজে মানুষের মাঝে দেশ প্রেমের সচেতনতার দিন দিন লোপ পাচ্ছে।মানুষ তিন দিন আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়ছে এবং মানুষের মাঝে স্বার্থপরতার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানুষ আজ নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত।দেশের মানুষের চিন্তা করার মানসিকতা তার নেই। দেশ প্রেমের চেতনাকে ভুলে গিয়ে নিজের স্বার্থকে বড় করে দেখছে। এই স্বার্থপরতার মনোভাব এর জন্য ধোনিরা ধনী হচ্ছে আর গরিবরা দিন দিন আরো গরিব হচ্ছে। এর ফলে দেশের অবনতি হয়।তাই আমাদের দেশের ও জাতির উন্নতির জন্য এই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।স্বদেশপ্রেমের গুরুত্ব বোঝাতে কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন,

  • "স্বদেশের উপকারে নাই যার মন
  • কে বলে মানুষ তারে,পশু সেই জন।"
স্বদেশ প্রেমের বহিঃপ্রকাশ: স্বদেশপ্রেম মানব হৃদয়ে লালিত হয়।স্বদেশের স্বাধীনতা রক্ষায়, স্বদেশের মানুষের কল্যাণ সাধনে মানুষের মনে স্বদেশপ্রেম জেগে ওঠে। দেশের প্রতি প্রেম সর্বদাই উদার ও খাঁটি। প্রকৃত দেশপ্রেমী কখনো ছোট মানসিকতার হয় না। আমাদের এই মাতৃভূমি এর জন্য লাখ লাখ মানুষ জীবনে উৎসর্গ করেছে।স্বদেশের তরে জীবন উৎসর্গকারীরা সমগ্র বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সন্তান। এভাবে নিজ স্বদেশের কল্যাণ ও উন্নতি কিভাবে করা যায় তা-ই একজন উপকৃত দেশপ্রেমীর চিন্তার মূল বিষয়।

স্বদেশপ্রেমের অনুভূতি: নিজ দেশ ও জন্মভূমির প্রতি মানুষের অকৃত্রিম ভালোবাসাই স্বদেশপ্রেম। স্বদেশের প্রকৃতি ও ধূলিকণা আমাদের নিকট অতি প্রিয় ও পবিত্র।দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি দুর্নিবার আকর্ষণ থেকে জমা হয় স্বদেশ প্রেমের।দেশের অগ্রগতি ও কল্যাণে ভূমিকা রেখে বিশ্ব সভায় অবদান রেখে দেশের গৌরব বাড়ানো যায়।

স্বদেশ প্রেমের বিকাশ: মা, মাতৃভাষা এবং মাতৃভূমি স্বদেশ প্রেমের বিকাশ ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায় একেকটি স্বতন্ত্র পর্যায়।যেমন মায়ের সাথে রয়েছে আমাদের নারীর বন্ধন যা কখনোই ছিন্ন হবার নয়। ঠিক তেমনি মাতৃভূমি হচ্ছে পৃথিবীর নির্দিষ্ট ভূখণ্ড যেখানে সকল মানবজাতির জন্ম। সুতরাং মা, মাতৃভূমি ভয়ে আমাদের তার হৃদয় আত্মার সাথে সম্পৃক্ত।

স্বদেশ প্রেমের প্রয়োজনীয়তা: দেশের প্রতি মামত্ববোধ ও ভালোবাসা ব্যতীত ব্যক্তি জীবনকে কখনোই সুন্দর ও সার্থক করা যায় না। দেশী সাফল্য ও সোনার প্রতিষ্ঠান লক্ষ্যে স্বদেশ প্রেমের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব অপরিসীম। মনুষ্যত্ববোধের জাগরণ ঘটিয়ে দেশের প্রতিটি নাগরিককে দেশ প্রেমিক আমার প্রয়োজনীয়তা আছে। দেশ প্রেম ছাড়া কখনো একটি দেশ সাফল্যের ছোঁয়া পায় না। দেশ থেকে বড় কোন ধর্ম নেই এবং স্বদেশপ্রেম থেকে বড় কোন কর্ম নেই। স্বদেশপ্রেম মায়ের ভালোবাসার মতো। মা যেমন তার সন্তানকে ভালোবাসে তেমনই একজন দেশপ্রেমিক তার স্বদেশকে ভালবাসে।

স্বদেশ প্রেমহীনতার কুফল: যেকোনো জাতির পতনের উপাখ্যানের সূত্রপাত হয় স্বদেশ প্রেমহীনতায়। দেশপ্রেম যেখানে মানুষের এক উন্নতবৃত্তি, সেখানে তা ত্যাগ তিতিক্ষার মহৎ বৈভবে উদ্ভাসিত, সেখানে তা গৌরবের বস্তু, অহংকারের বিষয়। যে জাতির মধ্যে স্বদেশ প্রেম থাকে না সে জাতি নিজেদের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করতে পারে না। স্বদেশ প্রেমহীনতা দেশের উন্নতি ও কল্যাণের পথে প্রধান অন্তরায়। একটি দেশের উন্নয়নের জন্য স্বদেশ প্রেম আবশ্যক।

উপসংহার: দেশপ্রেম মানবজীবনের একটী শ্রেষ্ঠ গুণ ও অমূল্য সম্পদ।স্বদেশ প্রেম মানে দেশের সকল মানুষ একত্রিত হয়ে হিংসা-বিদেষ ভেদাভেদ না করে,সাম্প্রদায়িক বৈষম্য না করে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করা। সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করে,স্বার্থপরতা ত্যাগ করে দেশের কল্যাণে সর্বস্ব বিলিয়ে দিতে হবে। তাহলেই দেশ, সামাজিক, অর্থনৈতিক দিক থেকে অগ্রসর হতে সক্ষম হতে পারবে।

FAQ

স্বদেশ প্রেম বলতে কি

নিজ দেশকে ভালোবাসাকে স্বদেশ প্রেম বলা

স্বদেশ প্রেমের রচনা কি

মূলত শিক্ষার্থীদের বাংলা দ্বিতীয় পত্রের জন্য রচনা অথবা একটি প্রবন্ধ লিখতে হয় যেটিতে ২০ নাম্বার দেয়া হয়। এজন্য পরীক্ষার্থীদের স্বদেশ প্রেমের রচনা লিখতে হয়

স্বদেশ প্রেমের সংজ্ঞা কি

দেশপ্রেমের সংজ্ঞার্থ : স্বদেশপ্রেম অর্থ হচ্ছে নিজের দেশের প্রতি, জাতির প্রতি, ভাষার প্রতি গভীর আকর্ষণ অনুভব করা। দেশের প্রতি প্রবল অনুরাগ, নিবিড় ভালোবাসা এবং যথার্থ আনুগত্যকে দেশপ্রেম বলে। জন্মভূমির স্বার্থে সর্বস্ব ত্যাগের সাধনাই স্বদেশপ্রেম।

স্বদেশ প্রেমের রচনা ক্লাস ৮ কখন লিখতে হয়

যখন পরীক্ষার্থীদের প্রশ্ন পত্রে স্বদেশ প্রেম নিয়ে রচনা লিখতে বলা হয় তখন ক্লাস ৮ এ স্বদেশ প্রেম নিয়ে রচনা লিখতে হয়

আমাদের শেষ কথা

আমাদের এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে স্বদেশ প্রেম রচনা ক্লাস ১০ এবং স্বদেশ প্রেম রচনা ২০ পয়েন্ট
ও স্বদেশ প্রেম রচনা সম্পর্কে স্বদেশ প্রেম রচনা ২৫ পয়েন্ট বিস্তারিত সকল ক্লাসের জন্য যেমন স্বদেশ প্রেম রচনা ১৫ পয়েন্ট স্বদেশ আরো প্রেম রচনা ক্লাস ৫ স্বদেশ প্রেম রচনা hsc অথবা যারা স্বদেশ প্রেম রচনা ক্লাস ৮ এর জন্য লিখবেন তাদের জন্য সংক্ষিপ্ত আকারে লেখা হয়েছে । আমাদের আর্টিকেলটি বিভিন্ন অনলাইন সোর্স হতে সংগ্রহ করা এবং বিভিন্ন বই থেকে নেয়া। আশা করি স্বদেশপ্রেম নিয়ে লেখা আমাদের এই রচনাটি আপনাদের ভালো লেগেছে ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সত্য আইটির নীতিমালামেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url